উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে রংপুরে মোটরসাইকেল চুরি: চুরি বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ দরকার!

শহর-বন্দর,হাট-বাজার, দাওয়াত খেতে যাওয়া বা জানাজার নামাজে শরিক হওয়া, রংপুরের বাসিন্দাদের জন্য এখন এক নতুন আতঙ্ক-মোটরসাইকেল চুরি। সম্প্রতি জেলাজুড়ে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত এক বছরে শত শত মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে, যার পেছনে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের বিশাল নেটওয়ার্ক।

এমন ঘটনা এখন রংপুরের প্রতিটি কোণে নিয়মিত চিত্র। আপনি হয়তো বাজারের ভিড়ে নিজের পছন্দের জিনিস কিনতে ব্যস্ত, ফাঁকা কোনো গলিতে আপনার শখের বাইকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখেছেন। কেনাকাটা শেষে ফিরে এসে দেখলেন, আপনার বাইকটি আর নেই! অথবা গ্রামের বাড়িতে বিয়ে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেতে গিয়েছেন, খাওয়া শেষে দেখলেন আপনার সাধের মোটরসাইকেলটি গায়েব। এমনকি জানাজার নামাজের মতো জরুরি মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে বাইক রেখে এসেও অনেকে দেখছেন, তাদের বাইকটি চুরি হয়ে গেছে, এমন কি নিজের বাড়ি থেকে শখের মোটরসাইকেলটি রাতে চুরি হয়ে গেছে। এমন শত শত উদাহরণ এখন রংপুরের ভুক্তভোগীদের মুখে মুখে।

রংপুর জেলাজুড়ে এই চোরচক্র এতটাই সক্রিয় যে, তাদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুঃখজনকভাবে, ভুক্তভোগীরা থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও তেমন কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। দু-একটি মোটরসাইকেল হয়তো বিভিন্ন উপায়ে উদ্ধার হচ্ছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুরি যাওয়া বাইকের কোনো হদিস মিলছে না। কিছু কিছু এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির সময় হাতেনাতে চোর ধরা পড়লেও, জেল খাটার পর তারা আবারও একই পেশায় নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মনে হতাশা বাড়ছে।

প্রতিকারের পথ কী?
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে:
পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি: জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চোরচক্রের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। শুধুমাত্র চোর ধরা নয়, তাদের মূল নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া এবং চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার: সাদা পোশাকে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো এবং চোরচক্রের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: বাইক মালিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভালো মানের লক ব্যবহার করা, জনাকীর্ণ স্থানে বাইক রাখা এবং সম্ভব হলে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীন এলাকায় পার্ক করা উচিত।
প্রযুক্তির ব্যবহার: আধুনিক প্রযুক্তি যেমন GPS ট্র্যাকার বা অ্যালার্ম সিস্টেম ব্যবহারে বাইক মালিকদের উৎসাহিত করা যেতে পারে।
আইনের কঠোর প্রয়োগ: চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারে পুলিশের ব্যর্থতা এবং চোরদের বারবার একই পেশায় ফিরে আসার প্রবণতা বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ধরা পড়া চোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এই ধরনের অপরাধ কমে আসবে।
আন্তঃজেলা চোরচক্র দমন: যেহেতু এসব চোরচক্রের নেটওয়ার্ক প্রায়শই আন্তঃজেলা হয়ে থাকে, তাই প্রতিবেশী জেলার পুলিশের সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।

রংপুর জেলায় মোটরসাইকেল চুরি এখন একটি সামাজিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার, পুলিশ এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। নয়তো, রংপুরের রাস্তায় শখের বাইক নিয়ে বের হওয়াটা প্রতিনিয়ত আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *