রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক সুপ্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন, যা পাখী মসজিদ নাম পরিচিত। মোঘল আমলের নির্মিত বলে প্রচলিত এই মসজিদটি শত শত বছর ধরে ধারণ করে আছে এক গৌরবময় ইতিহাস, যা আজও অনেকের কাছে অজানা।
অবস্থান ও পরিচিতি
তিস্তা নদীর পাশেই লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মান্দ্রাইন মৌজায় অবস্থিত এই মসজিদটি। এর অবস্থানগত বিশেষত্ব এবং নির্মাণশৈলী একে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র পরিচিতি। স্থানীয়দের মতে, প্রায় একশ বছর আগে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করেন। সময়ের সাথে সাথে এটি শুধু একটি উপাসনালয় নয়, পরিণত হয়েছে এলাকার এক অবিচ্ছেদ্য ঐতিহ্যে।
স্থাপত্যশৈলী ও বর্ণনা
পাখী মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৩ ফুট এবং প্রস্থ ১১ ফুট। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর তিনটি বড় গম্বুজ, যা দূর থেকে সহজেই চোখে পড়ে। এছাড়াও, মসজিদের চারদিকে রয়েছে ১২টি ছোট আকারের গম্বুজ, যা এর নান্দনিকতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা। ভেতরের অংশে ১০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের মতো একটি কাতার রয়েছে। এর গঠনশৈলী দেখেই অনুমান করা যায় যে এটি মোঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল। মূল মসজিদের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে বর্তমানে এর সামনে একটি পাকা ঘর তৈরি করে নামাজের স্থান বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আধুনিক প্রয়োজনের সাথে ঐতিহ্যকে একীভূত করেছে।
ইতিহাসের নীরব সাক্ষী
পাখী মসজিদ কেবল একটি ইমারত নয়, এটি মোঘল স্থাপত্যের এক নীরব সাক্ষী। শতবর্ষ পেরিয়ে আসা এই মসজিদটি আজও তার প্রাচীন রূপ ধরে রেখেছে, যা ইতিহাসপ্রেমী এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য এক গবেষণার বিষয় হতে পারে। এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। এই মসজিদটি সংরক্ষণ এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরার মাধ্যমে আমরা আমাদের সমৃদ্ধ অতীতকে আরও ভালোভাবে জানতে পারব।
