কলপাড় থেকে ডোবায় চেলে ফেলে হত্যা করা হয় ২১ দিনের শিশু মুনতাহা কে। ঠিক এমনটিই স্বীকারোক্তি দিয়েছে শিশুটির মা তানজিলা খাতুন। এমনটাই জানিয়েছেন শিশু মুনতাহা’র বাবা মিল্টন হোসেন। রবিবার দুপুরে নিজ স্ত্রী তানজিলা খাতুনকে আসামি করে ঝিনাইদহের সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার নম্বর ১৭ তারিখ-১৫.০৬.২০২৫।
শিশু মুনতাহা’র বাবা মিল্টন হোসেন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, শনিবার আমি গাজীপুর আমার কর্মস্থল থেকে আমার নিজ ব্যবহৃত মোবাইল হতে আমার স্ত্রীর ফোনে কল করে পরিবারের সকলের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি আমার মেয়ে মুনতাহা কি করছে জানতে চাইলে সে জানায় মুনতাহা তার পাশে শুয়ে আছে।
এর কিছুক্ষণ পর আমার প্রতিবেশী আমিনুলের ছেলে মোঃ সোহেল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাকে জানায় আমার মেয়েকে জ্বীনে আছর করে আমার বাড়ীর টিউবওয়েলের পানি নিষ্কাশনের ডোবায় ফেলে মেরে ফেলেছে। খবর পাওয়ার পর আমি রাতেই নিজ বাড়ীতে ফিরে আসি। আমার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের নিকট ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি ঘটনার দিন আমার মা নাসরিন বেগম আমার মেয়েকে গোসল করানোর জন্য আমার স্ত্রীর শয়ন কক্ষে গিয়ে দেখতে পান সে একা শুয়ে আছে।
আমার মেয়ে মুনতাহা সেখানে নেই। তখন আমার মা মুনতাহা কোথায় জানতে চাইলে আমার স্ত্রী জানায়, আমার ছোট বোন জ্বীম মুনতাহাকে নিয়ে গেছে। আমার মা জ্বীমকে খোঁজ করতে গিয়ে দেখে জ্বীম আমাদের গ্রামের শরীফুলের মরিচ ক্ষেতে মরিচ তুলছে। তখন জ্বীমের নিকট মুনতাহা কোথায় আছে জানতে চাইলে জ্বীম জানায়, সে সকাল থেকে এখানে মরিচ তুলছে। সে মুনতাহাকে দেখেনি। আমার মা দ্রুত বাড়ীতে ফিরে বাড়ীর আশেপাশের লোকজন সহ মুনতাহাকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে আমার ছোট ভাই নয়ন হোসেন আমাদের বসত বাড়ীর উঠান সংলগ্ন টিউবওয়েলের পানি নিষ্কাশন ডোবায় আমার মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখতে পায়।
পরবর্তীতে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ আমাদের বাড়ীতে গিয়ে মুনতাহার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার বাড়িতে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সামনে তানজিলার নিকট মুনতাহা মৃত্যুর সঠিক কারন জানতে চাইলে সে জানায়, প্রায়ই ঘুমের ভিতরে স্বপ্নে জ্বীনেরা তার নিকট বাচ্চা চাইতো এবং বিভিন্ন সময় জ্বীনেরা তার বাচ্চা নিয়ে যাবে মর্মে জানাচ্ছিল।
এই থেকে জ্বীনেরা মুনতাহাকে নিয়ে টিউবওয়েল এর পানি নিষ্কাশন ডোবায় ফেলে মেরে ফেলেছে। আমার স্ত্রীর কথাবার্তা আমার এলোমেলো মনে হয়। সে বারবার আমাকে এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলতে থাকে। এরপর রবিবার সকালে পুনরায় মুনতাহার মৃত্যুর সঠিক কারনে জানতে চাইলে সে জানায়, সে মুনতাহাকে আমার বসতবাড়ীর উঠান সংলগ্ন টিউবওয়েলের ডোবায় চেলে ফেলে রেখে ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকে।
এবিষয়ে জানতে শিশু মুনতাহা’র বাবা মোঃ মিল্টন হোসেনকে তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি বাড়িতে আসি। আমার স্ত্রী আমাকে এলোমেলো কথা বলছিলো। রবিবার সকালে সে জানায় মুনতাহা কে কলপাড় থেকে ডোবায় চেলে ফেলে রেখে ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকে সে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, শিশু মুনতাহা’র মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে শিশুটির মা তানজিলা খাতুনকে আসামি করে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি তানজিলা খাতুনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
