কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক বানভাসি মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ত্রাণ স্বল্পতার কারনে চরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছে এসব বন্যা দুর্গত মানুষেরা। চারনভূমি তলিয়ে থাকায় তীব্র হয়ে উঠছে গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট।

ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের সবগুলিই পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলি চরম খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছে। পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫ হেক্টর জমির পাটের ১০ শতাংশ, ১৫ হেক্টর জমির আউশের ৮০ শতাংশ, ৪৫ হেক্টর জমির শাকসবজির ৮০ শতাংশসহ ৬০ হেক্টর জমির রোপা আমনের ৫০ শতাংশ। এছাড়াও ইউনিয়নের মৎস্য চাষীদের আনুমানিক প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ সরবেশ আলী জানান, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ৬০টি বাড়ী সম্পূর্ণ ও ৯০টি আংশিক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে শুকনো খাবারের সংকট ও চুলা জ্বালাতে না পারায় অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন বানভাসী মানুষজন।

এদিকে পানি কমার সাথে সাথে নদ-নদীর ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠছে। কুড়িগ্রামের চলমান বন্যায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকাসহ ভাঙ্গনের হুমকীতে থাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ পরিদর্শন করেছেন রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো: হাবিবুর রহমান জানান, গত ২০ জুন থেকে এ পর্যন্ত কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জনই শিশু।

আরও পড়ুন: বড়াইগ্রামে মোবাইল ফোন না পেয়ে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, এ পর্যন্ত কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৭০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *