ক্ষুদ্র ও মাঝারী তরুণ উদ্যোক্তাদের সাথে বি’ইয়া’র আলাপন 

ক্ষুদ্র ও মাঝারী তরুণ উদ্যোক্তাদের সাথে বি’ইয়া’র অনলাইন আলাপনে তরুণ উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞগণ। ছবি: বি’ইয়া

চলমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর সঙ্কটকালীন সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারী তরুণ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার লক্ষ্যে B’Yeah, Google.org  এবং Youth Business International (YBI) – এর রেপিড রেসপন্স এন্ড রিকোভারি প্রকল্পটির মেয়াদ ১৬ এপ্রিল ২০২০ থেকে ১৫ এপ্রিল ২০২১ । এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে বি’ইয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ২০০ উদ্যোক্তাকে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা পরামর্শ, ই-কমার্স এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে অননলাইন প্রশিক্ষণ, অনলাইন মেন্টরিং সেবা প্রদানসহ ব্যবসার নতুন ধারণার আদান-প্রদানের জন্য ওয়েবিনার/ জুম-এর সেশন পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে ব্যবসা পরামর্শ সেবা প্রদান শুরু করেছে। তরুণ উদ্যোক্তারা যেন কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় নিজেদের দক্ষতা ও জানার পরিধি বিকশিত  করতে পারে সেই লক্ষ্যে এই কার্যক্রমে গুগল.ওআরজি এর সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।

রবিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হলো সফল তরুণ উদ্যোক্তাদের আলাপন শীর্ষক লাইভ জুম সেশন।

সেশনের অলাপচারিতায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় উদ্যোক্তারা তাদের সফলতা, বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্ভুত সমস্যা , সমস্যা সমাধানের নানা প্রতিকূলতা এবং উত্তরণের উপায় উপস্থাপন করেন। চারজন সফল উদ্যোক্তা ডা চিং চিং, কানজি ফতেমা,মনিরা মতিন জোনাকী  ও মো: সাইফুল ইসলাম এ সেশনে অংশ নেন। লাইভ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন  বি’ইয়ার বোর্ড মেম্বার গুলশান নাসরিন চৌধুরী, উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মেহেদী হাসান কিংশুক ও এইচআর অফিসার মো: মাজেদুর রহমান রানা।

বি’ইয়া’র বিভিন্ন অনলাইন সেবা পাওয়া উদ্যোক্তারা কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।

ভারটেক্স ক্রাফটের (পাটজাত পণ্য প্রস্তুতকারী) কর্ণধার তরুণ উদ্যোক্তা মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মতো অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এই মহামারীতে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। যদি এটি অব্যাহত থাকে তবে আমাদের ব্যবসা শীঘ্রই বন্ধ করতে হবে। এখনই প্রয়োজন বিকল্প কিছু করা এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সেই সাথে পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন করে শুরু করা। এই পরিস্থিতি আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের কেবল আর্থিকভাবেই নয়, বিকল্প পদ্ধতি যেমন ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন, অনলাইন প্রশিক্ষণ-মেন্টরিং, এবং ব্যবসায়িক পরামর্শ প্রয়োজন । সেই লক্ষ্যে বি’ইয়ার অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে আমি খুবই উপকৃত হয়েছি।

কানিজ ফাতেমা, টপ লেদার এর সিইও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তার মতো অনেক এসএমই উদ্যোক্তারা গুগলের সহযোগিতায় বি’ইয়া যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চলেছে, তা থেকে উপকৃত হতে পারেন। আমি বিভিন্ন ওয়েবিনার সেশনে অংশগ্রহণ করে জেনেছি কিভাবে অনলাইনে ব্যবসা পরিচালিত করতে হয়, শিখেছি কিভাবে পরিস্থিতি সামলিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।

মনিরা মতিন জোনাকী , প্রতিষ্ঠাতা জোনাকী বুটিকস্  এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের  মেন্টর রাজশাহী থেকে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমি ও তরুণ উদ্যোক্তারা অনলাইন কার্যক্রম ও অনলাইন টুলস ব্যবহার করে ব্যবসা সম্পর্কে আরো নতুন কিছু শিখতে সক্ষম হয়েছে। আমি তিন জন উদ্যোক্তার মেন্টর হিসেবে দেখেছি তারা এখন গত তিনমাস আগের তুলনায় অনেক আত্নবিশ্বাসী এবং পরিস্থিতি সামলিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করে ব্যবসাকে এগিয়ে নিচ্ছে। ”

ডা চিং চিং, ফিনারী এর স্বত্তাধীকারী বলেন, আমি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে খাপ খেইয়ে নিতে বি’ইয়া’র সহযোগিতা পেয়েছি। আমি ওয়াইবিআই’র বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের সাথে  ১৫ দিন ব্যাপী অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে জানতে পেরেছি আমরা বিশ্বের অন্যান্য উদ্যোক্তার চেয়ে কম নই ।  আত্নবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা আর সঠিক লক্ষ্য থাকলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। আমি সেই আত্নবিশ্বাস পেয়েছি বি’ইয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমে  অংশগ্রহণ করে।

মেহেদী হাসান কিংশুক, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, বি’ইয়া বলেন, এই প্রকল্পটির মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। আগে আমরা ঘর কেন্দ্রক প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ, মেন্টরিং ও ব্যবসায়িক পরামর্শ পরিচালনা করেছি। এখন তা পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হয়েছে। প্রথম দিকে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সংশয় থাকলেও এখন ধীরে ধীরে উধ্যোক্তা বিভিন্ন ওয়েবিনারে সাবলিলভাবে অংশগ্রহণ করছে। মজার বিষয় হলো জেলাশহর, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের  উধ্যোক্তারা আগ্রহ ও দক্ষতার সাথে অনলাইন সেশনগুলোতে অংশ নিয়ে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা  রুপান্তরে চিন্তা শুরু করেছে। আমি সকল উদ্যোক্তাকে এগিয়ে যাবার জন্য ধন্যভাদ জানাই, বি’ইয়া যে কোন ভাবে উদ্যোক্তাদের পাশে আছে-থাকবে।

গুলশান নাসরীন চৌধুরী, কোর মেম্বার ও রেডিয়েন্ট ইন্সটিটিউটের কর্ণধার বলেন, বি’ইয়া চিন্তা করে কিভাবে উধ্যোক্তাদেরকে অনলাইনে যুক্ত করাতে পারে। সেই লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, ফলে তরুণ উদ্যোক্তারা আশা ভরসা এবং কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলতে হবে সে বিষয়ে জানতে পারছে। আমরা আশা করি এই প্রকল্প তরুণ উধ্যোক্তাদেরকে অনলাইনে ব্যবসার প্রতি মনোনিবেশ করাবে এবং অনলাইনে উদ্যোগ পরিচালনা যে কঠিন কিছুই নয় সে বিষয়ে উদ্যোক্তারা নতুন কিছু শিখবে।

উল্লেখ্য,বি’ইয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন  জেলার প্রায় ৫০০ উদ্যোক্তাকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা পরামর্শ, নতুন নতুন বিষয়ে অননলাইন প্রশিক্ষণ, মেন্টরিং সেবা প্রদানসহ ব্যবসার নতুন ধারণার আদান-প্রদানের জন্য ওয়েবিনার/ জুম-এর সেশন পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে ব্যবসা পরামর্শ সেবা প্রদান করবে। যাতে তরুণ উদ্যোক্তারা কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় নিজেদের দক্ষতা ও জানার পরিধি বৃদ্ধি করতে পারে সেই লক্ষ্যে এই কার্যক্রমে গুগল.অরজি এর সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।

অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের অনাস্থা পরিলক্ষিত হয় এ ব্যপারে মর্নিং নিউজ বিডির এক প্রশ্নের উত্তরে উদ্যোক্তারা বলেন, কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইন পেজের রিভিউ, লাইক, সুনাম দেখে ক্রয়ের কথা বলেন। তাছাড়া উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের থেকে ক্রয় করলে ক্রেতারা আস্থা ফিরে পাবেন বলেই মনে করছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *