গ্যালাক্সি সিন্ডিকেটে জিম্মি মধ্যপ্রাচ্য রুট

 

এক এজেন্সির কাছে জিম্মি মধ্যপ্রাচ্যগামী এলারলাইন্সগুলো। প্রায়শই ওই রুটে টিকিট মূল্য কারসাজি করা হয়। যার মাধ্যমে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রবাসী শ্রমিকরা। আর লাভবান হন পুরনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি র ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা। জননিরাপত্তা সচিবের নেতৃত্বাধীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। সেই রিপোর্টের সূত্র ধরে গ্যালাক্সির কর্ণধার প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ, তার পরিবার এবং তার নেতৃত্বাধীন অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত শুরু করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। কর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। আর ওভারঅল দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে- মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটের টিকিট মূল্য প্রায় দেড়গুণ বাড়িয়েছে ওই সিন্ডিকেট। এ নিয়ে হৈ হৈ শুরু হলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি কাজ শুরু করে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ওই কমিটির রিপোর্টে পুরো টিকিট কারসাজির বিষয়টি ধরা পড়ে। রিপোর্টে আন্তর্জাতিক ১১টি এয়ারলাইন্স, তাদের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এবং ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে টিকিট কারসাজি এবং প্রতারণার প্রাথমিক প্রমাণ মিলে। প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে জমা হওয়া সেই রিপোর্টে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীর নাম ছাড়াই গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বরাদ্দ করে তা মজুত রাখা হতো। পরে সেগুলো হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে বিক্রি করা হতো দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে

গ্যালাক্সির সম্পৃক্ততা এবং.রিপোর্ট বলছে, সৌদিয়া,কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং থাই এয়ার ওয়েজের মতো বড় এয়ারলাইন্সের জিএসএ হিসেবে কাজ করে গ্যালাক্সি। ওই এয়ারলাইন্সগুলোর জিএসএ হওয়ার সুবাদে সস্তার টিকিট নাম ছাড়া ব্লক করে বেশি দামে বিক্রয় করে শতকোটি টাকা অবৈধ আয় করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসূফ ওয়ালিদ। গ্যালাক্সি ট্রাভেল ও গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত এবং দুবাই এবং লন্ডনে শতকোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ও অন্যান্য ব্যবসা আছে বলেও রিপোর্ট মিলেছে। তারা অনেক টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে বলেও প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। রিপোর্ট বলছে, এক গ্যালাক্সি প্রায় ৮টি এয়ারলাইন্সের জিএসএ নিতে সক্ষম হয় মূলত শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদে। ফ্যাসিস্টের দোসর ওয়ালিদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় এবং তাদের প্রভাব খাটিয়ে এটা হাসিল করেছেন। এনবিআর সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, কর ফাঁকির অভিযোগে আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তদন্ত এখনো চলমান জানিয়ে ট্যাক্স কমিশনার মো.আব্দুর রকিব বলেন, গ্যালাক্সির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তার ট্যাক্স ফাঁকির বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। প্রশ্ন হচ্ছে ট্যাক্সটা কীভাবে আদায় হবে। শেষ পর্যন্ত মামলায় যেতে হয় কিনা? তা বোর্ডে সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ট্যাক্স ফাঁকি নিয়ে আরও অনেক ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেন কর কমিশনার। উল্লেখ্য, সরকারি হস্তক্ষেপের আগে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা থেকে জেদ্দা, রিয়াদ, মদিনা ও দাম্মামের মতো শহরগুলোতে টিকিটের দাম ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিদেশগামী শ্রমিকরা। সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে বর্তমানে ওই রুটগুলোর টিকিটের দাম গড়ে ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে, যা পূর্বের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ কম।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গ্যালাক্সির প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদের গ্রামীণ ফোন এবং তার হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *