বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হলেও খালে কচুরিপনার কারণে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান বাড়িতে আনতে পারছে না কৃষকেরা।স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান জনগণদের নিয়ে কিছু কচুরিপনা অপসারণে চেষ্টা করলেও আর্থিক সংকটে থেমে গেছে কাজ।
একদিকে মাঠে পাঁকা ধান কাটার চাপ ও কচুরিপনা খাল আটকিয়ে থাকায় ধান সহজে বাড়ি আনতে না পারার দুঃচিন্তা এবং অপরদিকে প্রতিদিন ঝড়বৃষ্টির আশংকার মধ্যে কৃষকদের অবস্থা এখন দিশেহারা। এমন মারাত্মক সংকটের মুখে ভুক্তভোগীরা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বৃষ্টির আগে মাঠের ধান কেটে বাড়িতে আনতে না পারলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন। কচুরিপনা অপসারণের জন্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপ চেয়ে ভুক্তভোগী কৃষকের পক্ষে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।
সরেজমিনে চিতলমারী উপজেলার রায়গ্রাম এলাকায় গেলে ভুক্তভোগী কৃষক বিকাশ রায় জানান, “ধান পেঁকে গেলেও, খালে কচুরিপনার কারণে নৌকা দিয়ে বিল থেকে ধান আনতে পারছি না। আকাশে মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি নামলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের মেম্বার মোস্তফা তালুকদার ভাই বাঁশতলা খালের কিছু কচুরিপনা অপসারণ করেছেন। চার কিলোমিটার খালটি এখন কচুরিপনাতে আটকে আছে। এই খালের দু’পাড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কচুরিপনার কারণে সেই ফসল ঘরে উঠাতে না পারলে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের জরুরী সাহায্যে যাতে কচুরিপনা অপসারিত হয় তার দাবী জানাই।”
নুর মোহাম্মদ শেখ তার ধানী ক্ষেত ও বাঁশতলা খালের মাঝখানের আইলে (রাস্তা) বসে বলেন, “কিভাবে যে ঘরে ধান নিবো মাথায় কোন কাজ করছে না। এই খালে কয়েক’শ নৌকায় কচুরিপনা আটকে আছে। পাকা ধান কেটে ওই নৌকায় করে বাড়ি নিয়া সহজ। এখন তো তা হচ্ছে না। এতো পরিশ্রমের ধান মাঠে নষ্ট হলে আর বাঁচবো না।”
স্থানীয় ইউ’পি সদস্য মোস্তফা তালুকদার জানান, “কৃষকেরা আমার প্রাণের মানুষ। তাদের পাকা ধান ঘরে যাতে সহজে নিতে পারে সেই জন্য ইতিমধ্যে বাঁশতলা খালের কিছুটা জনগণ নিয়ে পরিস্কার করেছি। একটা মেশিন স্থানীয়ভাবে তৈরির কাজ চলছে। যা দিয়ে কচুরিপনা দ্রুত অপসারণ করা যাবে। কিন্তু আর্থিক সংকটে বাঁশতলা, গাবতলাসহ অন্য অন্য খালের কচুরিপনা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জরুরীভাবে সরকারি বরাদ্দ দরকার।”
চিতলমারী সদর ইউ’পি চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন জানান, “কৃষকের জরুরী সংকটের কথা মোস্তফা তালুকদার মেম্বারের কাছ থেকে শুনেই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাঁশতলা, গাবতলা, ডোবাখালী, নারায়ণখালীসহ কয়েকটি খালের কচুরিপনা জরুরী ভাবে অপসারণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চিতলমারী উপজেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সিফাত আল মারুফ মুঠোফোনে জানান, “অন্যান্য বছর কৃষকেরা স্লুইসগেট হতে লবণ পানি ঢুকিয়ে খালের কচুরিপনা মারতো তাতে উপকার থেকে বেশি ক্ষতি হতো। এবার কৃষকদের লবণ পানি না ঢুকানোর কারনে তারা বেশি ফলন পেয়েছে। কৃষক যাতে তাদের ফলন, পাকা ধান ভালো ভাবে ঘরে তুলতে পারে, তার জন্য সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ বছর ১২ হাজার একশ তেইশ হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল জানান, “দেশের অর্থনীতিতে চিতলমারী কৃষকেরা ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদনে ব্যাপক অবদান রাখছেন। চলতি মৌসুমে ধান যাতে কৃষক ঝড়বৃষ্টির মৌসুমের আগে ঘরে তুলতে পারে সেই জন্য সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। খালগুলোর কচুরিপনা জরুরীভাবে অপসারণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
