বিমানবন্দরে ‘বিশেষ সুবিধা’র ছায়া,  এক দিনে উচ্ছেদ ১৬ প্রতিষ্ঠান!

 

দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হঠাৎ করে ১৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ১ জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এ। পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকেও দুইটি প্রতিষ্ঠানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টোদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ ছিল একতরফা, রহস্যজনক এবং পক্ষপাতদুষ্ট।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের ইজারার মেয়াদ ৩০ জুন মধ্যরাতে শেষ হয়েছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৯ জুন, অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে এবং ৩০ জুন একটি সাধারণ নোটিশ জারি করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হয়।
কিন্তু সংশ্লিষ্টরা অিভেযাগ করে বলেন, এত কম সময় দিয়ে বরাদ্দ বাতিল করা আইনি ও নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে বরাদ্দ বাতিল করা হয় এরোস ট্রেডিং, মেসার্স সজল এন্টারপ্রাইজ, মাহবুবা ট্রেডার্স, নাহার কনস্ট্রাকশন, অ্যাভিয়েশন ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, এ ফাইভ রোডওয়ে, ওয়ার্ল্ড ট্রাস্ট ট্যুরিস্ট কার সার্ভিসেস, শিরিন এন্টারপ্রাইজ, হাওলাদার অ্যান্ড সন্স, অথৈ এন্টারপ্রাইজ, ওলফ করপোরেশন, আড়িয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন এবং ডিপার্টমেন্ট এস কনসালটিং-এর। এছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ফ্যালকন এজেন্সি এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্যালকন এয়ারপোর্ট সার্ভিস টিম-এর বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন ইজারাপ্রাপ্ত মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে অভিযোগ করে বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে তিন মাস আগেই নবায়নের আবেদন করেছি। কিন্তু শুনানি হয়নি, কাউকে ডাকা হয়নি, কর্তৃপক্ষ কোনো সভা ডাকে নি। অথচ একমাত্র একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে গোপনে নবায়ন করে আমাদের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে!”

তিনি আরও বলেন, “এটি একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া, এবং নিশ্চিতভাবেই এই একতরফা সিদ্ধান্তে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।

সূত্র জানায়, যেসব প্রতিষ্ঠান টানা ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে নবায়নসংক্রান্ত আলোচনার কথা থাকলেও কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এখন প্রশ্ন উঠেছে নবায়নের আবেদন নিয়ম মেনে জমা দেওয়ার পরও কেনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি?

বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—এমন দাবি বেবিচকের। কিন্তু হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত, একতরফা ইজারা বাতিল এবং ‘বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ’ সব মিলিয়ে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন যে এক্ষেত্রে পছন্দের লোকদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই এসব করা হয়েছে।
এখন সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছ তদন্ত ও দ্রুত সমাধান প্রয়োজন, না হলে এটি হবে এক নজিরবিহীন পক্ষপাত ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার উদাহরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *