রংপুরে সরকারি আবাসন প্রকল্পের বাড়ি বিক্রির অভিযোগ

রংপুরের বদরগঞ্জে ভূমিহীন মানুষদের জন্য নির্মিত সরকারি আবাসন প্রকল্পের বাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক উপকারভোগী। কেউ কেউ ভাড়া দিয়েছেন, আবার কিছু ঘরে বরাদ্ধপ্রাপ্তরা না থাকায় বছরের পর বছর তালা ঝুলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই আশ্রয়ন প্রকল্পে যাঁরা সচ্ছল ও যাঁদের জমি আছে, তাঁদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে বাড়িগুলোকে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের আইড়মারী ও ভীমের গড় ময়দানের চরের আবাসন প্রকল্পের আওতায় ১২০টি ঘর ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। সেখানে দুই শতক জমিসহ একটি করে বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। শর্ত অনুযায়ী বরাদ্ধ প্রাপ্তদের অবশ্যই ভূমিহীন হতে হবে এবং বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবেন না। এই শর্ত ভেঙে ১৬ টির মতো বাড়ি বেচে দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
গোপালপুর আইড়মারী আবাসন প্রকল্পে গিয়ে ৩ নম্বর বাড়িতে কথা হয় জাহানারা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়িটি তাঁর নামে বরাদ্দ নয়। এর মূল মালিক নুরজাহান, তার কাছ থেকে কাছ থেকে ৬৫ হাজার বাড়িটি কিনেছেন তিনি। এভাবে দুই মাস আগে রিপন ইসলামের ৯ নম্বর বাড়িটি কিনে নিয়েছেন এনামুল হক, গত তিন মাস আগে ১০ নম্বর বাড়িটি মঞ্জু বেগমের কাছ থেকে ৫০ হাজার কিনে জোবেদা বেগম,১১ নাম্বার বাড়িটি দুই বছর আগে ৫০ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন আতাউর রহমানের কাছ থেকে তাসলিমা বেগম স্বামী আরিফুল ইসলাম।
গোপালপুর ভীমের গড় ময়দানের চরে জোনাব আলী দুইটি ঘর পেয়েছেন, ঘর দুইটি দুই জন তৃতীয় লিঙ্গের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন, জেসমিন আক্তার ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন এসমোতারা বেগমের কাছে ৫৫ হাজার টাকায়, মনতাজ ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন নিয়েছেন আঞ্জুয়ারা ২০ হাজার টাকায়,আসাদুল হক ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন হাসিনার বেগমের কাছে, জেলেখা বেগম ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন শিরিনা বেগম এর কাছে, জিকরুল ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন আরজানা বেগমের কাছে, চায়না বেগম ২৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন ফারুকের কাছে, শহিদুল ইসলাম আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করেছেন মরিয়ম বেগম এর কাছে, অপরদিকে আনোয়ারা বেগমের ঘরে মিনারা বেগম বসবাস করে, আলমগীরের ঘরে থাকে রশিদ ও রাজ্জাকের ঘরটি ফাঁকা তালা বদ্ধ রয়েছে। এভাবে আরো অনেকগুলো ঘরে তালা ঝুলছে।
বাসিন্দারা আরও জানান, যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই নিজ নিজ বাড়ি রয়েছে।অনেকে একেকটি বাড়ি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তদন্ত করে অবৈধ ক্রেতাদের উচ্ছেদের দাবি জানান তাঁরা।
প্রকল্পের বাসিন্দা শহিদুল হক বলেন, তাঁর বাড়ির অপর প্রান্তের বাড়িটি যাঁর নামে বরাদ্দ ছিল, তিনি সেটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ঘর গুলোতে কেউ থাকেনা তালাবদ্ধ রয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হবে। আরেক বাসিন্দা সাবেরুল ইসলাম বলেন, আসাদুল নামের একজনকে বাসাটি বরাদ্দ দেওয়া হয় কিন্তু ঘটি ২৮ হাজার টাকায় হাসিনা বেগমের কাছে বিক্রি করে দেন । এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, শর্ত ভেঙে আবাসনের বাড়ি বিক্রির বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *