শার্শায় ভূয়া মানবাধিকার সংস্থা, রয়েছে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ!

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা যশোর পশ্চিম শাখার সভাপতি পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া ও পরিচিতসভার আয়োজনের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে আসাদুজ্জামান আসাদ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।

পরে সংগঠনটিকে মানুষের বিশ্বাসযোগ্য করতে শনিবার(১৫ ফেব্রুয়ারী) সকালে যশোরের শার্শার বাগআঁচড়া হাই স্কুল মাঠে পরিচিতি, মত বিনিময় ও শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান আয়োজন করে সংস্থাটি। এতে যশোর জেলা পুলিশ সুপার, শার্শা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সবিচ এ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, শার্শা থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাধারণ সম্পাদক নরুজ্জামান লিটন, শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ মোট ২৩ জনকে অতিথি করা হয়। তবে এই অনুষ্ঠানে একজন জামায়াত নেতা ছাড়া আর কোন আমন্ত্রিত অতিথিকে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।

এদিকে, শার্শা উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও হিউম্যান রাইর্টস যশোরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এটি একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন। এদের বিষয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই।

তথ্যনুসন্ধানে জানাগেছে, বাগআঁচড়া ইউনিয়ন ওলামালীগের সাবেক সভাপতি মৃত নেছার উদ্দীনের ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে ছিলেন। গত দুই বছর আগে দেশে এসে বেকার জীবনযাপন করছিলেন। হঠ্যাৎ গত কয়েকমাস অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল আজকের গোয়েন্দা সংবাদ নামের একটি পত্রিকা কার্ড গলায় ঝুলিয়ে  এবং একটি বুম সাথে নিয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে মানবাধিকার কর্মীর পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়ার নামে জন প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে অর্থ আত্মসাত করে আসছে।শনিবার উপজেলা বাগআঁচড়া হাইস্কুল মাঠে ঢাঁক ঢোল বাজিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার নামে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করলে বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আসে। পরে বিভিন্ন দপ্তরে সংস্থাটির সত্যতা নিয়ে জানতে চাইলে সকলে এটাকে ভুঁইফোড় বলে অবহিত করেন।

শার্শা উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নরুজ্জামান লিটন জানান, তারা দাওয়াত পেয়েছিলেন। তবে সংস্থাটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ভালো তথ্য না পাওয়া ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ কোন কিছু না জানানোতে তারা আসেননি।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম তিনি কেন আসেননি জানতে চাইলে বলেন, তিনি সরকারি কাজে ব্যস্ত আছেন। এ সময় তিনি সংস্থাটির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং সাংবাদিকদের ও খোঁজখবর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

অভিযুক্ত আসাদ জানান, আমাদের সংস্থার নিয়ম হচ্ছে  সদস্য হতে গেলে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়।তিনি এই টাকা কতজনের কাছ থেকে নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি তড়িঘড়ি করে আলাপ কলটি কেটে দেন।

হিউম্যান রাইর্টসের যশোরের নির্বার্হী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক জানান, এ সব কতিপয় ভুয়া সংগঠনের লোকজন সেবা প্রার্থীদের ভুল বুঝিয়ে মানবাধিকারের নামে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।পারিবারিক, জমিসংক্রান্তসহ যে কোনো সমস্যা সমাধানের নামে অর্থ আদায় করে তারা। প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন তদবিরের পাশাপাশি করছে আইডি কার্ড বাণিজ্য। সংগঠনের মনোগ্রাম ও পতাকা ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে কেউ কেউ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশসহ সরকারের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

শার্শা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌহিদ মিলন জানান, এ নামের মানবাধিকার সংস্থার বিষয়ে তার কাছে এবং অফিসে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি  ক্ষতিয়ে দেখছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান জানান, সংস্থাটির বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সংগঠনটি যদি প্রতারণার সাথে জড়িত থাকে, তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *