শার্শার মাটিপুকুরের মানুষ গত ৫০ বছরেও পায়নি, পাকা বা অর্ধ পাকা রাস্তা।

যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের মাটিপুকুর গ্রামের প্রধান রাস্তাটি যেন উন্নয়নশূন্য এক জনপদের প্রতিচ্ছবি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় পার হলেও মাত্র দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাঁচা রাস্তাটি আজও পাকা হয়নি। বর্ষা এলেই সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তার অস্তিত্বই হারিয়ে যায় কাদার নিচে। রাস্তাটিতে কোথাও নেই ইট, নেই খোয়া, এমনকি পাকা করার কোনো প্রস্তুতিও নেই—রাস্তার মুখ পর্যন্ত যেন কেউ দেখতে আসেননি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাউতাড়া স্কুল থেকে কিছুটা মাঠ হয়ে মাটিপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কোথাও নেই উন্নয়নের সামান্য ছোঁয়া। ইট-বালুর তো প্রশ্নই আসে না, পথজুড়ে শুধু কাদা আর জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিনের অবহেলায় রাস্তার এমন দশা যে, দেখে মনে হয় এটি কোনো চাষের জমি—নয় যেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী প্রধান চলাচলের সড়ক।

এই রাস্তায় চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় আশপাশের ৫-৬টি গ্রামের মানুষকে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগী, বৃদ্ধ, শিশুরা প্রতিদিন যাতায়াত করে এই কাদাময়, পিচ্ছিল পথে। বর্ষাকালে কারও হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে, কোথাও কোথাও হাঁটুসমান কাদা জমে যায়।

লাউতাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মারিয়া বলেন, “আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে মাদ্রাসায় যায়, পা ফেললেই কাদায় আটকে যায় জুতা। অনেক সময় জামা-কাপড় ভিজে যায়, আমরা অনেক কষ্ট করছি—সরকারের কাছে আবেদন, যেন এই রাস্তা পাকা করে আমাদের কষ্টের শেষ করে।”

স্থানীয় নারী ফাতেমা খাতুন বলেন,বর্ষা আসলেই আমাদের দুঃখের শেষ নেই, “এই রাস্তা দিয়ে গর্ভবতী নারী বা অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে হলে চরম বিপদে পড়তে হয়। ভ্যানে উঠানো যায় না, অ্যাম্বুলেন্স তো ঢুকতেই পারে না। আমাদের যেন কেউ দেখার নেই—সরকার আসে, যায়, কিন্তু আমাদের কষ্ট থেকে যায় সেই আগের মতোই।”

স্থানীয় যুবক জামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “স্বৈরাচার সরকারের সময় আমরা এই এলাকার মানুষ বিএনপির সমর্থক বলেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।

বছরের পর বছর কাদা-পানির মধ্যে চলতে হয়েছে, কিন্তু একবারও আমাদের রাস্তার দিকে ফিরেও তাকায়নি তারা। স্বৈরাচার সরকার আজ ইতিহাসের পাতায়, কিন্তু দুর্ভোগটা রয়ে গেছে আমাদের কাঁধেই। সরকার বদলেছে, নেতা বদলেছে—কিন্তু মাটিপুকুর গ্রামের মানুষের ভাগ্য বদলায়নি। এখনো আমরা কাঁধে জুতা নিয়ে হেঁটে যাই, সন্তানদের স্কুলে পৌঁছাতে হয় কাদার ভিতর দিয়ে। এত কষ্টের পরও কেউ দেখার নেই।” 3milyartoto

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডা.কাজী নাজিব হাসান বলেন,“লাওতারা স্কুলের পাশে আমরা প্রায় ৩০০ ফুট একটি রাস্তা নির্মাণ করেছি। মাটিপুকুর এলাকার রাস্তার বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে বিস্তারিত যাচাই করতে হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করব। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবভিত্তিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব কি না, সেটা দ্রুত দেখব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *