সুবর্ণচরে বিয়ের কাবিন নিয়ে কাজীর প্রতারণা; বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পিতা হারা নারী

কাজীর প্রতারণায় সৃজন করা কাবিন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বিয়ের কাবিন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মোঃ ইব্রাহিম খলিল রাসেল নামে এক কাজীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হলেও কাবিনামায় উল্লেখ করা হয় মাত্র ২ লক্ষ টাকা।

কাজীর এমন প্রতারণায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল। এদিকে ওই কাজীর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে প্রশাসনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবাহারা ভুক্তভোগী অসহায় নারী শারমিন আক্তার।

ঘটনাটি ঘটেছে সুবর্ণচর উপজেলার ৪ নং চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর ওয়াপদা গ্রামে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) শারমিনের মা শেফালী বেগম বাদি হয়ে চরজব্বার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সরেজমিন ও থানায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, চর ওয়াপদা গ্রামের মৃত ইউছুপের মেয়ে শারমিন আক্তার (২৩) এর সাথে একই গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের পুত্র মোঃ ছালা উদ্দিন (২৬) এর সাথে সামাজিকভাবে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর বিয়ে হয়। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিয়ে পড়ান একই এলাকার সমাজের ঈমাম মাওলানা মোঃ জাকের হোসাইন।

সে বিয়ের কাজীর দায়িত্ব পালন করেন চর ওযাপদা গ্রামের ওহাব মাষ্টারের পুত্র মোঃ ইব্রাহিম খলিল রাসেল। এসময় বিয়ে সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পরে সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ করবেন জানিয়ে বিয়ের দিন কাজী রাসেল সবকিছু একটি সাদা কাগজে লিখে নেন।

অভিযুক্ত কাজী ইব্রাহিম খলিল রাসেল

এদিকে বিয়ের পর কিছুদিন ভালো থাকলেও গত দুইমাস ধরে স্বামী ছালা উদ্দিন শারমিন আক্তারকে যৌতুকের জন্য মারধর করে আসছে। সম্প্রতি নির্যাতনের বিষয়ে শারমিনের মা শেফালী বেগম প্রতিবাদ করলে ছালা উদ্দিন শারমিনকে তালাক দেয়ার হুমকি দেন।

পরে বিষয়টি এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি শারমিনকে তার কাবিননামা দেখাতে বলেন। পরে শারমিন চর বৈশাখী থানার হাটে অবস্থিত কাজী অফিসে কাবিননামা আনতে গেলে টালবাহানা করেন কাজী রাসেল। এ ঘটনায় সমাজের লোকজন চাপসৃষ্টি করলে অবশেষে গত ২৯ জুলাই কাবিননামা দেন ওই কাজী।

কিন্তু কাবিননামা হাতে পেয়ে অবাক হন নির্যাতিতা নারী শারমিন আক্তার। কাবিন নামায় ৯ লক্ষ টাকা স্থলে ২ লক্ষ টাকা উল্লেখ করা হয়, এরমধ্যে ১ লক্ষ টাকা উসুল দেখানো হয়। প্রতিবাদ করলে শারমিনকে গুম খুনের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেন শারমিনের মা শেফালী বেগম।

শারমিনের মা শেফালী বেগম আরও বলেন, কাজী রাসেল আমার মেয়ের স্বামী সালাহ উদ্দিনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে ৯ লক্ষ টাকার কাবিনের জায়গায় ২ লক্ষ টাকা উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আমি যেন মুখ না খুলি। বাবাহারা এতিম মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো? আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।আর কোনো মেয়ের জীবন যেনো নষ্ট না করতে পারে।

জানা যায়, শারমিনের স্বামী সালাহ উদ্দিন বিয়ের আগে শারমিনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়, পরে সামাজিক শালিসি বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে উপরোক্ত তারিখে ৯ লক্ষ টাকায় দেনমোহর ধার্য করে শারমিনকে বিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ইব্রাহিম খলিল ওরপে কাজী রাসেল স্থানীয় আল আমিন বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি’র দায়িত্ব রয়েছেন। সে ক্লিনিকে সরকারিভাবে ওষধ দেয়া হলেও তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকারি ওষধের জন্য জনপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।

দীর্ঘবছর ধরে সরকারি ওষধ মানুষের কাছে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন ইব্রাহিমকে খলিল ওরফে কাজী রাসেল। কিন্তু সরকার দলের পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব খাটানোর ফলে এর কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না কেউ।

জানতে চাইলে চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম, সেখানে ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে শারমিনের বিয়ে হয় কিন্তু এখন কাজি রাসেল কাবিনামায় ২ লক্ষ টাকা উল্লেখ করেছেন, যা বড় ধরণের অন্যায় এবং প্রতারণা। আমরা চাই দোষীদের শাস্তি হোক।

আরও পড়ুন: বিশ্বে ৫ বছরে ২০ শতাংশ ই-বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে : জাতিসংঘ

চর ওয়াপদা ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহর হয়েছে এটা সত্য, তবে কাজী সাহেবের এরকম প্রতারণা করা ঠিক হয়নি। বাপ হারা এতিম মেয়েটির সাথে এমন ঘটনা সত্যই দুঃখজনক।

চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাহেদ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সার্বিক বিষয়ে অভিযুক্ত রাসেলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *